সাক্ষাৎকারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সীমাবদ্ধতা লিখ
সাক্ষাৎকারের ভালো ও মন্দ দিকগুলো তুলে ধর।
ভূমিকা: সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সমাজকর্মী ও ব্যাক্তির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং তাদের মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়। ফলে ব্যক্তির কাছ থেকে সমাজকর্মী সহজেই ব্যক্তি ও তার সমস্যা সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। ব্যক্তি সমাজকর্মে তথ্যসংগ্রহের অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো সাক্ষাৎকার পদ্ধতি। তবে এর কিছু সীমাদ্ধতা রয়েছে।
সাক্ষাৎকারের সুবিধা
সাক্ষাৎকারের সুবিধাসমূহ নিচে দেয়া হলো:
১. মৌলিক তথ্য প্রাপ্তি সম্ভব হয়ঃ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর পেশাগত সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এর মাধ্যমেই ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর যোগাযোগ স্থাপিত, মতামত বিনিময় এবং একে অপরকে জানার মাধ্যমে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
২. পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনঃ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর পেশাগত সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
৩. ব্যক্তির মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াঃ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সমাজকর্মী ব্যক্তির সাথে কথাবার্তা, চলাফেরা, হাবভাব ইত্যাদি অবলোকন করতে পারেন। এর মাধ্যমে সমাজকর্মী ব্যক্তির মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণেরও সুযোগ লাভ করেন।
৪. অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য সহায়ক পদ্ধতি: অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের তথ্য সংগ্রহের জন্য সাক্ষাৎকার একটি উত্তম পদ্ধতি। কারণ এসব দেশের অধিকাংশ লোক নিরক্ষর কিংবা কম শিক্ষিত। ফলে তারা প্রশ্নপত্র পূরণ করে তথ্যবলি জানাতে সক্ষম হয় না। তারা একদিকে যেমন লিখতে ও পড়তে পারে না তেমনি অনেক প্রশ্নের গুরুত্ব ও অনুধ্যান করতে পারে না। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়।
৫. সাক্ষাৎকারীর বিভিন্ন বিষয় জানা: সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে মুখোমুখ আলাপ হয়। ফলে সাক্ষাৎকারীর চিন্তা- চেতনা, মতামত, প্রত্যাশা ইত্যাদি জানা সম্ভব হয়।
৬. নিয়ন্ত্রণ: যে পরিবেশে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়, সে পরিবেশের ওপর সাক্ষাৎ গ্রহণকারী সমাজকর্মীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। অন্য কোনো পদ্ধতিতে সমাজকর্মীর এরূপ নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
৭. সাময়িক যাতনা থেকে ব্যক্তির যুক্তিপ্রাপ্তি: সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজকর্মীর নিকট তার মনের যাতনা ব্যক্ত করে থাকেন। সমাজকর্মী এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে উপদেশ, পরামর্শ ও সাহস প্রদান করে সাময়িক যাতনাদায়ক পরিস্থিতি থেকে নিষ্কৃতি দেন।
সাক্ষাৎকারের অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
১. সরাসরি যোগাযোগ ছাড়া সম্ভব নয়: সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে সাক্ষাৎ প্রদানকারী ও সাক্ষাৎগ্রহণকারীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে সাধারণত Face to Face উদ্দেশ্যভিত্তিক আলোচনা করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। Face to Face আলোচনা বা কথাবার্তা ছাড়া ওটা প্রায় অসম্ভব।
২. সময় ব্যয়: তথ্য সংগ্রহের যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে অনেকটা বেশি ব্যয় করতে হয়। এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎ প্রদানকারী ও সাক্ষাৎ গ্রহণকারী উভয়কেই সাধারণত একই সময়ে মিলিত হতে হয়। এক্ষেত্রে সময়ের Adjustment problemও হতে পারে।
৩. তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা: সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যাদির নির্ভরযোগ্যতা অনেকটা কম বলে অনেকে মনে করেন।
৪. সাক্ষাৎ গ্রহণকারীর পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্য: সাক্ষাৎ গ্রহণকারীর মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রত্যক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় পার্থক্যের সৃষ্টি হতে পারে। এতে প্রাপ্ত তথ্যাবলি ভিন্নরকম হতে পারে।
৫. লিপিবদ্ধকরণ সমস্যা: সাক্ষাৎকার একটি বাচনিক প্রক্রিয়া। বাচনিক প্রক্রিয়া হওয়ায় মৌখিক কথাসর্বস্ব তথ্য লিপিবদ্ধকরণের অনেক সমস্যা রয়েছে।
৬. দক্ষ কর্মীর অভাব: সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে পেশাগত, দক্ষতাসম্পন্ন ও নৈপুণ্যতাসম্পন্ন কর্মীর প্রয়োজন পড়ে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে রকম যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর অভাব দেখা যায়।
৭. অর্থনৈতিক সমস্যাঃ সাক্ষাৎ প্রদানকারী অনেক সময় অর্থনৈতিক লাভের প্রতি দৃষ্টি রাখে এবং বিকৃত তথ্য প্রদান করে।
৮. মূল্যবোধ সংক্রান্ত জটিলতা: মূল্যবোধ সংক্রান্ত জটিলতাও সাক্ষাৎকারের একটি অন্যতম অসুবিধা। গ্রামের অশিক্ষিত নারীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার। এর কারণ অনেক পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলাকে ধর্মীয় বিধিনিষেধ বলে মনে করে। ফলে তাদের কাছ থেকে পুরুষ কর্মীরা তথ্যসংগ্রহ করতে পারে না।
৯. ভয় পাওয়া: গ্রামের অশিক্ষিত জনগণ সাক্ষাৎগ্রহণকারীর সামনে আসলে অনেক সময় ভয় পায়। তারা ভয়ে সঠিক তথ্য নাও দিতে পারে। এতে করে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
১০. পক্ষপাতিত্ব: সাক্ষাৎকার যেহেতু মৌখিক যেহেতু সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নিলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না। ফলে তথ্য সংগ্রহের ফলাফল পুরাপুরি সঠিক নাও হতে পারে।
১১. উপযুক্ত পরিবেশের অভাব: পরিবেশ অনুকূল না থাকলে তা সাক্ষাৎকারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন- সাক্ষাৎ দানকারী যদি মহিলা এবং সাক্ষাৎগ্রহণ নারী যদি পুরুষ হয়, তাহলে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে তা অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সাক্ষাৎকারই তথ্য সংগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সমাজকর্মীর পেশাগত সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে সমাজকর্মী ব্যক্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য লাভ করতে পারে, সে তথ্য সমাজকর্মীকে সাহায্যার্থীর সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।